আমাদের জীবন অনেক কঠিন সিদ্ধান্তে ভরপুর — আমার কোন চাকুরিটি করা উচিৎ? কোন মেয়েকে বিয়ে করবো? কোন গাড়ি কিনবো? কোন ব্যাবসাতে ইনভেস্ট করবো? — এরকম হাজারো লাখো চয়েজের সামনে সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত! অনেক সময় আমাদের কাছে বেশ কিছু অপশন থাকে, আর যতোবেশি অপশন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আরো অনেক বেশি ট্রিকি হয়ে যায়।
সমস্যা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক কঠিন বা কমপ্লেক্স একটি যন্ত্র, যেটাতে ভর্তি রয়েছে অনেক কমপ্লেক্স ইমোশন। যদিও সবকিছুই মস্তিষ্কের উপর, তারপরেও আমরা আমাদের মন বলেও একটা জিনিষ রয়েছে এরকম কল্পনা করে থাকি এবং সেই অনুসারেই কাজ করি। অনেক সময় স্পস্তি দেখা যাচ্ছে একটি অপশন আরেকটি অপশন থেকে সকল দিক থেকে বেটার তারপরেও আমরা বিপরীত অপশনটিই চয়েজ করি, কেননা আমাদের মন সায় দেয়। যেখানে মন বলে কিছুই নেই, মস্তিষ্কের আরেকটি পারসোনালিটি বলতে পারেন।
যখন আমাদের কাছে পছন্দ করার মতো অনেক চয়েজ থাকে সেক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই বিভ্রান্তির মধ্যে পরে যাই, সিদ্ধান্ত নিতেই পারি না কোনটা করবো আর কোনটা বাদ দেবো। গবেষণায় দেখা গেছে এরকম বেশিরভাগ মানুষের সাথেই ঘটে থাকে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে ভুল করে বসি। লাইফ এক অনেক বড় আর লম্বা অধ্যায়, এক আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে শেখানো সম্ভব নয় আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ কিভাবে তৈরি করবেন, তবে এই আর্টিকেলটি আপনাকে বেসিক আইডিয়া গুলো অবশ্যই দিতে পারবে!
শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখুন
--------------------------
আমি মনে করি, লাইফে অলৌকিক ঘটনার উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকা যাবে না, অনেকেই রয়েছেন যারা ভাগ্যের আশায় বসে থাকেন অনেকটা লটারি জয় করার মতো আশায়। তারা ভাবেন পর্যাপ্ত সময় দিয়ে বসে থাকলে ভালো কিছুই হবেই, নতুন কিছু সুযোগ আসবেই লাইফে। কিন্তু সেই সুযোগ আর কখনোই আসে না, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি আর আমাদের গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত আমাদের তৈরি করে। কোন কিছুর উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় অবশ্যই সেটার শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত আপনাকে কোন পথে বইয়ে নিয়ে যেতে পারে তার প্রত্যেকটি অংশ কল্পনা করতে হবে, তারপরেই সিদ্ধান্তটির সাথে চলতে চান নাকি সিদ্ধান্তটি বর্জন করতে চান সেটার চয়েজ তৈরি করতে হবে।
আপনার লাইফে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছুই ঘটবে না, লাইফে লটারির আশায় বসে থাকলে কাজ হবে না, লটারি জেতার আশায় লটারি কেনে মিলিয়ন মানুষ কিন্তু লটারি যেতে মাত্র ১ জন আর যেটা শুন্যর বরাবর। লটারি জেতা আপনার জন্য হতে পারে সবথেকে বড় দুর্ভাগ্য!
আপনি যদি কোন মিরাকেলের আশায় বসে থাকেন আর দিন গুনতে থাকেন একদিন আপনার দিন আসবে আর আপনি সবকিছু হাসিল করবেন, না, দুঃখিত এভাবে আপনার দিন কোন কালেই আসবে না। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যেটা বেটার হয়, তা হচ্ছে খাতা থেকে একটি কাগজ চিরে সেখানে মাঝ বরাবর একটি লম্বা রেখা টানা, তারপরে একদিনে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহনের খারাপ দিক গুলো লিখতে হবে আরেকদিকে এর ভালো দিক গুলো লিখতে হবে। সর্বশেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সেটাতে যেটার এন্ট্রি বেশি।
তবে সবক্ষেত্রে যে সুবিধা আর অসুবিধার কাউন্ট করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাই নয়। যদি কোন সিদ্ধান্তের সুবিধা হয় ” ১০ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব” আর এতে অসুবিধা যদি থাকে “কেবল হাতের চামড়া শক্ত হয়ে যেতে পারে” – তো এক্ষেত্রে এই অসুবিধার জন্য এই সুবিধাকে বিয়োগ করা যাবে না। আপনি এক্ষেত্রে ক্রেডিট সিস্টেম তৈরি করতে পারেন, যেমন- বড় লাভের সুবিধাকে +৫০ ক্রেডিট দিয়ে দিয়েন তারপরে ছোটখাটো রিস্কে -১ হিসেবে ধরলেন, এভাবে আপনার সুবিধা আর অসুবিধার চার্ট তৈরি করতে সুবিধা হবে এবং আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হতে পারবেন। অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্তে আবেগ কাজ করতে পারে আর তখন সুবিধা বা অসুবিধার চার্ট তৈরি করা যুক্তিযোগ্য নাও মনে হতে পারে, কিন্তু বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই হিসেব কসে নেওয়া প্রয়োজনীয়।
নিজেকে নিজের মতো রাখুন
--------------------------
জীবনে এরকম দেখানোর চেষ্টা করবেন না, মানে আপনাকে যেটা দেখা যাচ্ছে আপনি আসলে সেটা নয়ই, আপনি অন্য কারো মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন। ভালো করে মনে রাখবেন, নিজের সাথে অভিনয় করে খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারবেন না, মুখোশ পরে থাকতে থাকতে একসময় আপনার আসল চেহারায় হারিয়ে যাবে আর সেটা ক্লান্তিজনক হয়ে উঠতে পারে, আপনার আরেক পারসোনালিটি যেটা আমি ফেক করে চলছেন সেটা এক সময় অবশ্যই বোঝায় পরিণত হয়ে উঠবে।
আপনার ভেতরের এনার্জিকে চেনার চেষ্টা করুণ, আপনি কি পারবেন আর কি পারবেন না সেটা আপনার থেকে ভালো আর কেউ জানে না, যদি মনে হয় আপনি করতে পারবেন তো হ্যাঁ আপনি পারবেনই! আপনার এনার্জি অনুসারে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, সেই রাস্তায় হাটার চেষ্টা করুণ যে রাস্তা দ্বারা আপনার লাইফকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। যখন আপনি লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন তখন আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোথায় এগোতে চান, আর কতোদূর এগোতে চান, আপনার জানা থাকতে হবে কোথায় থামতে হবে আবার কোথা থেকে শুরু করতে হবে।
আর এগুলোর বেস্ট কন্ট্রোল তখনই করা সম্ভব হবে, যখন আপনি নিজের মতো থেকে নিজেকে উন্নত করবেন। যখনই অন্য কারো মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন সেটা বোঝায় পরিণত হতে পারে।
আরো পাঁচ বার ভাবুন
যখনই কোনকিছুতে সমস্যা হয়ে যাবে বা যখনই কিছু ঠিক চলবে না জিজ্ঞেস করুণ, “কেন সমস্যা হলো?” জিজ্ঞেস করতেই থাকুন, আরো পাঁচবার জিজ্ঞেস করুণ। একই সমস্যা নিজেকে জিজ্ঞেস করতে করতে দেখবেন উত্তর বেরিয়ে আসবে। শুধু সমস্যার সমাধানই নয়, বারবার জিজ্ঞাসা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও আপনাকে সাহায্য করবে।
কেন আমার এই জবটি করা উচিৎ? কারণ এটা থেকে ভালো উপার্জন করা সম্ভব, যেটা আমার জীবন পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? কেননা আমি আমার ক্যারিয়ার গরতে চাই। কেন? কারণ আমার জীবনের একটা সুন্দর মূল্য রয়েছে। কেন? যাতে আমি সুখে থাকতে পারি। কেন? কেননা লাইফে সুখী হওয়াটাই সবকিছু।
দেখলেন, বারবার “কেন” প্রশ্ন থেকে কিভাবে অভ্যন্তরীণ উত্তর গুলো বেরিয়ে আসছে। এভাবে আপনার সিদ্ধান্তের উপর আপনাকে বারবার “কেন” প্রশ্ন করতে হবে, যদি জীবনের আসল উদ্দেশ্য বের হয়ে আসে তো অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তের সাথে যাওয়া উচিৎ হবে।'
ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহনে কখনোই দেরি হয় না
---------------------------------------
আপনি জীবনের কোন পর্যায়ে রয়েছেন বর্তমানে সেটা টেম্পোরারি, কিন্তু কোথায় যাবেন বা কোথায় আপনার যাত্রা শেষ হবে সেটা কিন্তু পার্মানেন্ট। আপনি বর্তমানে কোথায় রয়েছেন সেটা ব্যাপার নয়, আপনি সামনে কোথায় যাবেন বা যেতে পারেন সেটাই মূল ব্যাপার। আমি বলবো সময়ের সাথে চলতে, সবসময় নিজের ভিশনকে সামনের দিকে রাখতে, পেছনের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন কিন্তু কখনোই অতীত হতে আপনাকে নিশ্চল করতে দেবেন না। আপনি যদি দুনিয়া পরিবর্তন করার স্বপ্ন দেখে থাকেন, অবশ্যই পূর্বে আপনার নিজের দুনিয়া পরিবর্তন করতে হবে।
তো পূর্বের খারাপ সিদ্ধান্ত, অলস সিদ্ধান্ত, গাধামু সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহন করুণ, পূর্বের উপর ভিত্তি করে কখনোই নিজেকে নির্ধারণ করবেন না, যদি আবার নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই হয় সেটা গ্রহন করতে ভয় পাবেন না, ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহনে কখনোই দেরি হয় না, আপনার আজকের গ্রহণ করা একটি উত্তম সিদ্ধান্ত নির্ধারিত করবে কালকের আপনাকে।
আপনি লাইফে যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুণ না কেন, অবশ্যই সেখানে আপনার পরিতুষ্টি থাকা চাই, যদি আপনি কোন চয়েজে নিজেকে প্রেসারে অনুভব করেন সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি যতোই সঠিক হোক না কেন আপনি বেশিরভাগ সময় নেগেটিভই ফিল করবেন। তো পন্থা অনুসরণ করার পাশাপাশি নিজের সন্তুষ্টি ফিল করাটাও গুরুত্বপূর্ণ, কেননা রাস্তাটা তো আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন