বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিসিএসের প্রস্তুতি একই সঙ্গে
মো. আবু জাফর মজুমদার, সহকারী পরিচালক (সুপারিশপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ ব্যাংক ও ৪০তম বিসিএস-প্রশাসন (সুপারিশপ্রাপ্ত)
আমি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি ২০১৯ সাল থেকে। মূলত বিসিএসই লক্ষ্য ছিল, একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদটিও ছিল পছন্দের তালিকায়। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষার সিলেবাসের বেশির ভাগই বিসিএসের সঙ্গে মিলে যায়।
আমি অন্যান্য পরীক্ষায়ও অংশ নিই।
সব চাকরিপ্রার্থীরই প্ল্যান ‘এ’র পাশাপাশি প্ল্যান ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ থাকা উচিত। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলে প্রস্তুতি জোরদার হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও অনেকটাই বেড়ে যায়, যা বিসিএস বা বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে সহায় হবে। এবার আসি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে।
প্রিলিমিনারি: বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মূলত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে। প্রিলিমিনারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গণিত। কারণ ব্যাংক ও বিসিএসের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নে মূল পার্থক্য গণিতে। ব্যাংকের পরীক্ষায় তুলনামূলক কঠিন গণিত প্রশ্ন হয়ে থাকে, যা বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালিসিস করলে অনুধাবন করা যায়। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার কারণে এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়ায় যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় গণিত ছিল আমার সবচেয়ে স্ট্রং জোন। এ ছাড়া বুয়েটের ছাত্র থাকাকালে প্রচুর টিউশনি করতাম। তাই গণিত নিয়মিত অনুশীলন হতো। গণিত অংশে যাঁদের দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরা বিগত বছরগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারেন এবং অঙ্কগুলো অবশ্যই বুঝে বুঝে সমাধানের চেষ্টা করুন।
এ ছাড়া ইংরেজি অংশে ভালো করার জন্য গ্রামার ও ভোকাবুলারি অংশে গুরুত্ব দিতে হবে। বিসিএসের জন্য এসব বিষয়ের প্রস্তুতি থাকার কারণে এই অংশে অতিরিক্ত প্রস্তুতি আমি নিইনি।
এ ছাড়া বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ, কম্পিউটার, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ের জন্যও বিসিএসের প্রস্তুতির বাইরে বাড়তি প্রস্তুতির দরকার হয়নি।
সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য নিয়মিত প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। দৈনিক সংবাদপত্রের অর্থ-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক ও সম্পাদকীয় পাতা এবং সাম্প্রতিক বিষয়াবলির ওপর প্রকাশিত কমপক্ষে একটি মাসিক সাময়িকী থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখলে ভালো প্রস্তুতি হয়ে যাবে। সবার জন্য পরামর্শ হলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর বাড়তি জোর দিন।
লিখিত: লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি ফোকাস রাইটিং, সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি passage থেকে প্রশ্ন্ন, গণিত, অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা), সামারি রাইটিং, পত্র লিখন ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে।
0১. প্রথমেই বলে রাখি, লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপর আপনার চাকরি পাওয়া নির্ভর করবে। আর লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করার উপায় হচ্ছে গণিত ও ইংরেজি অংশে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া। লিখিত পরীক্ষায় গণিত অংশে ভালো করার জন্য বিগত বছরের ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করেছিলাম।
0২. বিসিএস পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি অংশে রচনার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিভিন্ন টপিকের ওপর তথ্যবহুল নোট তৈরি করেছিলাম, যা আমাকে ফোকাস রাইটিং অংশে সাহায্য করেছিল। ফোকাস রাইটিংয়ে ভালো করার জন্য বিভিন্ন সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিজে নোট করে পড়লে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ফোকাস রাইটিং লেখার সময় বিভিন্ন তথ্য ও পয়েন্ট নীল কালির কলম দিয়ে হাইলাইট করে দেবেন।
0৩. অনুবাদ অংশে ভালো করার জন্য ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় অংশ নিয়মিত পড়া এবং তা নিজে নিজে অনুবাদ করার ওপর জোর দিন।
0৪. লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নেরই উত্তর ছেড়ে আসা যাবে না। তাই সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভাইভা: বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার ভাইভার জন্য নিজের সম্পর্কে, নিজ জেলা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, অনার্সে নিজের পঠিত বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম, অর্থনীতিসংক্রান্ত কমন বিষয় (যেমন—জিডিপি, রিজার্ভ, ডলারসংক্রান্ত তথ্য, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, ব্যাংক রেট, রেপো ও রিভার্স রেপো রেট ইত্যাদি) সম্পর্কে জেনে যেতে হবে। আমার স্নাতকের বিষয় ছিল পুরকৌশল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং)। তাই আমার বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাইভা পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল পুরকৌশলসংক্রান্ত বেসিক প্রশ্ন।
একাডেমিক ফলাফল ভালো না হলেও মনে আত্মবিশ্বাস ছিল
সুজন চন্দ্র ঘোষ, সহকারী পরিচালক (সুপারিশপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ ব্যাংক, মেধাক্রম-৯১
আমার একাডেমিক ফলাফল তেমন ভালো ছিল না। তবে নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ছিল। পরিকল্পিত প্রস্তুতি আর পরিশ্রমের ফলে অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত (৯১তম মেধাক্রম) হতে পেরেছি। প্রার্থীদের বলব, কোন বইটি পড়ছেন, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—কী পড়ছেন, কিভাবে পড়ছেন। সুনির্দিষ্ট সিলেবাস না থাকায় বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিজেই সম্ভাব্য সিলেবাস তৈরি করে ফেলুন। ব্যাংকের পরীক্ষার ক্ষেত্রে গণিতের পাশাপাশি ইংরেজি গ্রামার, অ্যানালজি, ভোকাবুলারি, অনুবাদ, ফ্রি হ্যাংন্ড রাইটিংয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিন। গণিতের ক্ষেত্রে প্রথমেই সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের বইগুলো ফলো করুন। এরপর প্রচলিত কোনো বই দেখতে পারেন। গণিত মানেই চিন্তাশক্তির গভীরতার পরীক্ষা! ব্যাংকের প্রিলিতে বাংলা সাহিত্যের চেয়ে ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো খুঁজে বের করুন। রিটেনের জন্য সময় অনেক কম পাবেন, তাই প্রিলি এবং রিটেনের প্রস্তুতি সমন্বিতভাবে করতে পারলে ভালো হয়।
প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে আগে জানতে হবে
আবদুল্লাহ আল নাঈম, সহকারী পরিচালক (সুপারিশপ্রাপ্ত) বাংলাদেশ ব্যাংক, মেধাক্রম-১
নিয়োগ পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে প্রথমেই ভালোভাবে জানতে হবে। এরপর পাঠ বা প্রস্তুতি পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। সবার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা একই রকম না-ও হতে পারে।
কম সময়ে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা শুরু করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রশ্নপদ্ধতি ও ধরন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা হবে। ফলে প্রস্তুতির ছক তৈরি ও পরীক্ষার হলের সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা করা সহজ হবে। এ ছাড়া কোন কোন অংশে নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতা আছে, সেটিও চিহ্নিত হবে।
আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, পরীক্ষায় আগের বছরের কোনো প্রশ্ন রিপিট হলে সহজেই উত্তর করা যাবে। গণিতের ক্ষেত্রে শুধু সমাধান নয়, বরং কম সময়ে সমাধানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। লিখিত পরীক্ষায় গণিতে যেহেতু পুরো নম্বর পাওয়া সম্ভব, তাই বেশি বেশি চর্চা করা উচিত। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়লে ফোকাস রাইটিং, প্যাসেজ, সামারি এবং সাধারণ জ্ঞান—সব কিছুর জন্যই কাজে আসবে। দেশের চলমান বিষয় ও আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কিত খবরগুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
ইংরেজি দৈনিক থেকে অজানা শব্দগুলো নিয়ে নোট করলে সেটি অনুবাদ অংশের জন্যও সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে ভাইভার নম্বরের প্রভাব তুলনামূলক কম। কিন্তু তার পরও নিজ জেলা, অনার্সে নিজের পঠিত বিষয়, কেন বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে চান এবং সমসাময়িক বিষয়াবলি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়েই ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
BCS Preparation, বিসিএস প্রস্তুতি, job preparatio, BCS, bank job, govt. job & NTRCA job preparation book, How do I start preparing for BCS? How do you qualify for BCS? How hard are BCS exams? Which book is best for BCS exam? BCS Preliminary Preparation - BCSExam, bcs preparation online, bcs preparation questions and answers, bcs preparation syllabus, bcs preparation plan;, Recruitment test preparation, নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি। চাকরির পরীক্ষার বাংলা ..., সরকারী চাকরির প্রস্তুতি, নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন