সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে || What Qualifications are Required to be a Soldier in the Bangladesh Army
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিবছর সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ পদে নিয়মিত লোকবল নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সাধারণত এসএসসি বা সমমান পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই এ পদের জন্য আবেদন করা যায়। সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধার বিচারে সেনাবাহিনীর চাকরি বেশ চাহিদাসম্পন্ন।
তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতে চাইলে দরকার কিছু যোগ্যতা। এসব যোগ্যতা থাকলেই মিলবে চাকরি। তাহলে চলুন দেখে নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কী কী যোগ্যতা লাগে-
আবেদনের যোগ্যতা
সাধারণ (জিডি) পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ–৩.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রার্থীর বয়স ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ১৭ বছরের কম এবং ২০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
কারিগরি পদে আবেদনের জন্য এসএসসি ভোকেশনাল থেকে সংশ্লিষ্ট কারিগরি বিষয়ে ন্যূনতম জিপিএ–৩.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এসএসসি/সমমান পাস হলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট ট্রেড কোর্সে ৬ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। ট্রাস্ট টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (টিটিটিআই) থেকে ট্রেড কোর্স সম্পন্নকারী নারী ও পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। তবে টেকনিক্যাল ট্রেডের (টিটি) ক্ষেত্রে শুধু পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অবিবাহিত এবং সাঁতার জানা থাকতে হবে।
সেনাবাহিনীতে কত ফুট উচ্চতা লাগে
খুব কমন একটি প্রশ্ন, সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কেমন উচ্চতা লাগে? সাধারণত উচ্চতার বিষয়টি নারী ও পুরুষ ভেদে আলাদা হয়। পুরুষ প্রার্থীর শারীরিক উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৪৯ দশমিক ৯০ কেজি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি এবং স্ফীত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি হতে হবে। তবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৪৭ কেজি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি হতে হবে। তবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি। নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অবিবাহিত ও সাঁতার জানা থাকতে হবে।
সেনাবাহিনীতে বয়স কত লাগে
সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য ন্যূনতম সাড়ে ১৬ বছর থেকে ২১ বছর হতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর হতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনো এফিডেফিট গ্রহণযোগ্য হবে না।
কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না
তবে কয়েকটি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীতে চাকরি হবে না। যেমন আপনি যখন সেনাবাহিনীর জন্য লাইনে দাঁড়াবেন তখন যদি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরে আপনার দুই হাতের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাঁকা না থাকে। তাহলে আপনাকে বাদ দেওয়া হবে। অনেকের শারীরিক উচ্চতা এবং বুকের মাপ এবং অন্যান্য দিক থেকে সঠিক থাকলেও চোখের সমস্যার কারণে অথবা চোখের দৃষ্টি শক্তি কম থাকলে বাদ দেওয়া হতে পারে।
তাছাড়া আপনার উচ্চতা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার পরেও যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ওজন না থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রে আপনাকে যোগ বলে বিবেচিত করবে না।
নিজের ইচ্ছাকৃত শরীরের কোন কাটা দাগ যদি তারা দেখতে পায় অথবা বড় ধরনের এক্সিডেন্টের কারণে আপনার শরীরে যদি কোন ধরনের কাটার দাগ থাকে তাহলে বাদ দিতে পারে। মেডিকেল ডাক্তার যদি আপনাকে অযোগ্য বলে বিবেচিত করে তাহলে কিছু করার নেই এবং আপনার যদি নাকে পলিপাস থাকে তাহলে আপনাকে ক্ষেত্রে বাদ দেয়া হবে।
সেনাবাহিনীতে কি কি কাগজ লাগে
সেনাবাহিনীতে যোগদানের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদপত্র অথবা মার্কশিট, প্রশংসাপত্র অথবা প্রবেশপত্র, অভিভাবকের সম্মতিসূচক সনদপত্র, নাগরিকত্ব ও চারিত্রিক সনদপত্র, নাগরিকত্ব ও চারিত্রিক সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। এগুলো কাগজপত্র শারীরিক পরীক্ষার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে।
বেতন ও সুযোগ সুবিধা
চূড়ান্তভাবে সৈনিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নির্ধারিত স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ বিনা মূল্যে আহার, বাসস্থান সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা, বিনা মূল্যে সরকারি পোশাক, ভর্তুকি মূল্যে রেশন এবং সেনাবাহিনী পরিচালিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সাধারণ একজন সৈনিকের সাধারণ বেতন ৯৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে।
সৈনিক
নিয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে নির্বাচন করা হয়?
আইএসপিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে
কথা বলে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর সৈনিক নির্বাচন পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে হয়। প্রার্থীদের
প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বিষয়
থাকবে পাঁচটি—বাংলা,
গণিত, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে হলে
প্রার্থীদের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইগুলো পড়তে হবে, পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়াবলি
সম্পর্কে ধারণা থাকলে সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে ভালো করা যাবে।
প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজ নিজ ভর্তি পরীক্ষার
৭২ ঘণ্টা আগে খুদে বার্তার মাধ্যমে পরীক্ষার স্থান ও তারিখ জানানো হবে। লিখিত পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেওয়া হবে। টেকনিক্যাল ট্রেডের প্রার্থীদের
সংশ্লিষ্ট ট্রেড বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
সেনাবাহিনীতে
নিয়োগের পর কিভাবে প্রশিক্ষন দেয়?
লিখিত ও মৌখিক এবং অন্যান্য পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। সেনাসদরের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক বছর মেয়াদি মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি
চাকরির প্রার্থীরা এইচএসসি ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন।
আবেদন যেভাবে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে হয় অনলাইনে। আবেদন ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন এখানে (https://joinbangladesharmy.army.mil.bd/)।
বিস্তারিত জানতে অনলাইন আবেদন বা ভর্তিসংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন পরিচালক, পারসোনেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিদপ্তর, অ্যাডটুজেন্ট জেনারেল শাখা, সেনাবাহিনী সদর দপ্তর, ঢাকা সেনানিবাস। টেলিটক নম্বর থেকে কল করতে পারেন ১২১ ও ০১৫০০১২১১২১ নম্বরে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন