গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় ভালো করার মন্ত্র BCS Written Exam Preparation

৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
গাণিতিক সমস্যা : গণিতে যত বেশি অনুশীলন করা যাবে, ভালো নম্বর তোলা তত সহজ হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরগুলোর বিসিএস প্রশ্নগুলো নিজে নিজে সমাধান করতে হবে।

সমাধান করার সময় যে ধরনের অঙ্ক জটিল ও সময়সাপেক্ষ মনে হবে, সেগুলো আলাদা নোট করে রাখবেন।
গাণিতিক সমস্যা সিলেবাস দেখলেই বুঝতে পারবেন—বেশির ভাগই অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইয়ের আলোকে করা।
আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোয় এসব বই থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন এসেছে। এসব বইয়ের পাটিগণিত, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতির (উদাহরণসহ) প্রতিটি অংশ ভালোভাবে বুঝে সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত বই থেকে বিন্যাস-সমাবেশ অংশটি চর্চা করলেই চলবে।

গণিত নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। গাণিতিক সমস্যাগুলো বুঝে বুঝে ধাপে ধাপে এগোলে এখান থেকেই প্রায় গোটা নম্বর তোলা যায়। কোনো সমস্যা না বুঝলে যাঁরা বোঝেন, তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই গোঁজামিল বা অনুমাননির্ভর সমাধানের পথে হাঁটতে যাবেন না।
গণিত চলে সূত্র আর হিসাব-নিকাশে, এখানে অনুমানের কোনো সুযোগ নেই। সূত্র মনে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো সম্ভব হলে এক পৃষ্ঠায় লিখে পড়ার টেবিলের সামনে রাখতে পারেন, প্রতিদিন দেখতে দেখতে এমনিতেই মাথায় গেঁথে যাবে।

কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেতে হলে কিছু কিছু বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে—
পাটিগণিতের লসাগু-গসাগু, গড়, ঐকিক নিয়ম, বিশেষ করে কাজ ও সময়, সুদকষা, লাভ ও ক্ষতি, অনুপাত ও সমানুপাত এবং মান নির্ণয় থেকে সাধারণত বেশি প্রশ্ন আসে। এখান থেকে ৩-৫টি প্রশ্ন থাকতে পারে।

বীজগণিতে মান নির্ণয়, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, সমাধান ও লগের অঙ্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া অসমতা, সেট, সম্ভাব্যতা এবং বিন্যাস ও সমাবেশেও টাচ দিতে হবে। এখান থেকে সাধারণত ৩-৪টি প্রশ্ন আসে।

জ্যামিতির মৌলিক অংশ থেকে ২টি প্রশ্ন পেতে পারেন। একটি অবশ্যই কোনো উপপাদ্য বা সূত্র প্রমাণ, অন্যটি হবে সরলরেখা, ত্রিভুজ বা বৃত্তের পরিমাপসংক্রান্ত। পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রমাণ ও বিকল্প প্রমাণগুলোয় গুরুত্ব দিন। ত্রিকোণমিতি থেকে সাধারণত ২টি প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে দুটি রেখার অন্তর্ভুক্ত কোণ, মিনার/ছায়ার দৈর্ঘ্য বা উচ্চতা নির্ণয়ের ১টি প্রশ্ন থাকবেই। পরিমিতি অংশ থেকে যেকোনো ক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ক্ষেত্রফল বা পরিসীমা নির্ণয়সংক্রান্ত ১টি প্রশ্ন থাকার সম্ভাবনা বেশি।

সাধারণত গণিতে মোট ১২-১৪টি প্রশ্ন থাকে, সেখান থেকে ১০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আবার, ১২টি প্রশ্নকে দুই ভাগে (ক ও খ) বিন্যাস করে ৬টি প্রশ্নও করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মোট ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। গণিতে পারলে হিরো, না পারলে জিরো—এমন অবস্থা। তাই ৫০-এ ৫০ টার্গেট করুন। গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা অনেকটা দেখে দেখে লেখার মতো! আগের লাইনই বলে দেবে পরের লাইন কী হবে।

মানসিক দক্ষতা : এ অংশে প্রার্থীর যুক্তিবোধ, মানসিকতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা যাচাই করা হয়। মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো একটু ব্যতিক্রম ও জটিল হয়। বহু নির্বাচনী প্রশ্নের বিকল্প উত্তরগুলো খুব কাছাকাছি এবং বিভ্রান্তিমূলক হয়। সচেতনভাবে মাথা না খাটালে ভুল করে ফেলা খুবই স্বাভাবিক। এই অংশের পরীক্ষাটা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতোই। তবে সুবিধা হচ্ছে—বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় দুই ঘণ্টায় ২০০টি প্রশ্ন—অর্থাৎ এক ঘণ্টায় গড়ে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, এখানে দিতে হবে ৫০টি। সুতরাং তাড়াহুড়ার কিছু নেই।

মানসিক দক্ষতা অংশে সাধারণত গণিত ও ইংরেজির ছোট ছোট ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন, বিভিন্ন ধরনের সংকেত, প্রতীক ও চিত্রের পারস্পরিক মিল-অমিল সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকে। এই অংশে ভালো করতে হলে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বাসায় বসে সমাধান করতে হবে।

বাজারের ভালো মানের যেকোনো গাইড বই থেকে চর্চা করতে পারেন।
বিসিএস প্রিলিমিনারি ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসা গণিত ও ইংরেজির ছোট ও ক্রিটিক্যাল প্রশ্নগুলো আলাদা করে নোট করে বা গুরুত্ব অনুযায়ী রঙিন কালি দিয়ে দাগিয়ে পড়লে ভালো হয়। কিছু কিছু বিষয় (যেমন ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা কতটি?) সরাসরি মুখস্থ করে ফেলতে হবে।

► বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার ওপর ১০০ নম্বর। এর মধ্যে গাণিতিক যুক্তি অংশে ৫০ নম্বর। ২ ঘণ্টায় ১০টি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। মানসিক দক্ষতা অংশে ১ ঘণ্টায় ৫০টি মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে, প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কাটা যাবে।


রফিকুল ইসলাম
সহকারী পরিচালক
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ


কৃতজ্ঞতা: কা‌লেরকণ্ঠ

মন্তব্যসমূহ