বিসিএস আবেদন নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা + উত্তর
৪১তম বিসিএস আবেদন ফরম পূরণ প্রক্রিয়া অনলাইনে (bpsc.teletalk.com.bd) এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, চলবে ৪ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত। বিসিএসের প্রথম চ্যালেঞ্জ ‘প্রিলি’ হলেও ফরম পূরণ নিয়ে প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা কম না। প্রার্থীদের সচরাচর জিজ্ঞাসা, সমস্যা ও কমন সব কনফিউশন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জবাব দিচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে কর্মরত (প্রভাষক, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ)
বিসিএস আবেদন প্রক্রিয়া ও ফরম পূরণ নিয়ে প্রার্থীদের কমন কিছু জিজ্ঞাসা থাকে, এখানে কয়েকটি জিজ্ঞাসা ও তার জবাব তুলে ধরা হয়েছে—
—যদি আবেদন ফি জমা না দেন, তাহলে ৭২ ঘণ্টা পর এটি বাতিল হয়ে যাবে।
তখন নতুন করে ফরম পূরণ করলে নতুন ইউজার আইডি পাবেন। নতুন ইউজার আইডি ব্যবহার করে টাকা জমা দেবেন। আর যদি এরই মধ্যে টাকা জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সাবমিট করা ফরমের ভুল আপনি সংশোধন করতে পারবেন না, শুধু সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) করতে পারবে। ঢাকার আগারগাঁও পিএসসি ভবনের নিচতলায় হেল্প ডেস্ক আছে, সেখানে সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।
—বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, এইচএসসি পাসের পর চার বছর মেয়াদি ডিগ্রি (স্নাতক) থাকতে হবে। এ অবস্থায় আপনার উপায় হচ্ছে, ডিগ্রি পাস কোর্সের পর মাস্টার্স সম্পন্ন করা।
অনার্সের চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল যে বছর হওয়ার কথা ছিল, সেশনজটের কারণে এর এক বছর পর পরীক্ষা হয়েছে। আর ফলাফল পরের বছর। এখন যে বছর পরীক্ষা হয়েছে ‘পাসের সাল’ সে বছর দেব, নাকি যে বছর ফলাফল প্রকাশ হয়েছে সেটা দেব?
—আপনার অনার্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার বা ফলাফল প্রকাশের সাল যা-ই হোক না কেন, আপনার অনার্স যে সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং পরীক্ষার প্রশ্নে যে সাল উল্লেখ আছে, সেটিই আপনার পাসের বছর বলে বিবেচিত হবে।
প্রকাশিত ফলাফলেও বছর উল্লেখ থাকে।
আমি যদি শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডার ফরম পূরণ করি, তাহলে কি আমি বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারের চাকরি পাব?
—আপনি জেনারেল/বোথ/টেকনিক্যাল—যে ক্যাডারেই আবেদন করুন না কেন, নন-ক্যাডার চাকরি পাবেন। যে নন-ক্যাডারে সুপারিশ করা হবে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে আপনার রিকয়ারমেন্ট মিলতে হবে। যেমন—নন-ক্যাডারের থাকা সব প্রার্থী থেকে এনবিআরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়া যাবে; কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ধারী হতে হবে।
—আপনি কোন সেক্টরে যেতে চান এবং আপনার ব্যক্তিত্ব, স্কিল, পঠিত বিষয় যে ক্যাডারের সঙ্গে মেলে, তার ওপর ভিত্তি করে ইচ্ছামতো ক্যাডার চয়েজ দিতে পারবেন। তবে টেকনিক্যাল বা জেনারেলের যে ক্যাডারগুলোতে প্রতিযোগিতা কম হয় তা আগে দিলে এবং বেশি প্রতিযোগিতা হয় এমন ক্যাডার পরে দিলে—পরেরটা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে টেকনিক্যাল ক্যাডার ভালো লাগলে এটা পছন্দক্রমের যেকোনো জায়গায় দিতে পারেন। যেমন—ব্যক্তিগতভাবে অনেক জেনারেল ক্যাডারের চেয়ে শিক্ষা ক্যাডারকে আমার বেশি ভালো লাগে। ভালো লাগাটা অনেকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাই বলব—আপনার নিজের চাওয়াকে গুরুত্ব দিন।
—সিজিপিএ ভালো হলে মৌখিক পরীক্ষায় বোর্ড প্রার্থীকে ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করতেই পারে; কিন্তু তাই বলে এটা যে খুব বেশি প্রভাব ফেলে তা না। অনেকেই কম সিজিপিএ নিয়ে জেনারেল ক্যাডার বা শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি করছেন।
আমি বিবিএ করেছি; কিন্তু বিসিএসের ফরমের গ্র্যাজুয়েশন অংশে বিবিএ নেই। অনার্স সিলেক্ট করে ফরম পূরণ করলে কী কোনো সমস্যা হবে? নাকি others সিলেক্ট করে বিবিএ উল্লেখ করে দিতে হবে?
—অনার্স সিলেক্ট করলে আপনার সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে আসবে। others সিলেক্ট করে বিবিএ দিলে শিক্ষা ক্যাডারের সাবজেক্ট পাবেন না। বিবিএ কিন্তু চার বছর মেয়াদি অনার্স ডিগ্রি।
এসএসসিতে আমার মায়ের নামের বানান ভুল এসেছে। তবে এইচএসসি, অনার্স, মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের বানান ঠিক আছে। আমি কী এখন এ অবস্থায় আবেদন করতে পারব? নাকি আগে বানান ঠিক করাতে হবে?
—আপনি আবেদন করতে পারবেন। বিসিএস প্রিলির আবেদনে যেসব তথ্য দেবেন, পরবর্তী সময়ে লিখিত অথবা মৌখিক পরীক্ষার আগে ডকুমেন্টস চাওয়া হবে এবং আবেদনের তথ্যের সঙ্গে ডকুমেন্টসের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। ডকুমেন্টস দেওয়ার আগেই ভুলগুলো সংশোধন করে ফেলতে হবে।
আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে মা-বাবার নাম এক রকম, কিন্তু বাবা বা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম অন্য রকম। এতে কি সমস্যা হবে?
—বিসিএস আবেদনের সময় শুধু আপনার তথ্য লাগলেও মৌখিক পরীক্ষার আগে বিপিএসসি-৩ ফরমে এবং সুপারিশ পাওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। তাই সবার তথ্য দ্রুত সংশোধন করে ফেলুন।
আমার একটি রোগ আছে। আমি কী মেডিক্যাল টেস্টে বাদ পড়ব?
—বিসিএসের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বুকের এক্স-পর, দৃষ্টিশক্তি ও ইউরিন পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার রিপোর্টে খারাপ কিছু না এলে এবং দৃশ্যত কোনো সমস্যা না থাকলে আপনার বাদ পড়ার কথা না। আর বিসিএস এমন একটি প্রক্রিয়া—যদি আপনার মেডিক্যাল কিংবা পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে খারাপও কিছু আসে এবং পরে যদি নিজের অবস্থা স্বাভাবিক বা শুধরে নেওয়া যায়, তাহলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকে।
জেনে রাখুন...
১. আপনি যে ক্যাডারেই চাকরি করেন, সেখান থেকেও আপনি উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন। উপসচিব পদের ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে, অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ পূরণ হয় অন্যান্য ক্যাডার থেকে।
২. পুলিশ ও আনসার ক্যাডারে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম উচ্চতা ছেলেদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ০ ইঞ্চি চাওয়া হয়েছে। এই উচ্চতার শর্ত যাঁদের পূরণ হয় না, তাঁরা কোনোভাবেই এই দুটি ক্যাডার পছন্দের তালিকায় রাখবেন না। এ ছাড়া যাঁদের বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও এ দুটি ক্যাডার চয়েস দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
৩. পুলিশ ও আনসার ব্যতীত অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ন্যূনতম উচ্চতা পুরুষ প্রার্থীদের ৫ ফুট ০ ইঞ্চি, নারী প্রার্থীদের ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রয়োজন হবে।
ক্যাডার চয়েস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
► অনেকেই মনে করেন—যে ক্যাডারে পদসংখ্যা বেশি, পছন্দক্রমে সেই ক্যাডার আগে রাখলে ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে প্রার্থীদের যে মেধাতালিকা হবে, তার ভিত্তিতেই বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার বণ্টিত হবে।
উদাহরণ হিসেবে আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মিলে নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম থেকে ৫০তম প্রার্থীর ক্যাডারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করতে পারি।
► প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন তিনি যে ক্যাডার ‘প্রথম পছন্দ’ দিয়েছেন, সেটা নিশ্চিতভাবেই পাবেন। কারণ তখনো সব ক্যাডারের সব পদ অবণ্টিত অবস্থায় আছে (এভাবে প্রথম বেশ কয়েকজনই হয়তো সেটা পাবেন)।
► যিনি মেধাতালিকায় ৩০তম হয়েছেন, ধরে নিই, তাঁর প্রথম পছন্দ পররাষ্ট্র। এখন দেখা গেল—পররাষ্ট্র ক্যাডার বণ্টন শেষ (অর্থাৎ তার আগের মেধাক্রমের কমপক্ষে ২৫ জন প্রার্থীর প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র এবং সে অনুযায়ী তাঁরা পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে গেছেন), তাহলে দেখা হবে তাঁর দ্বিতীয় পছন্দটি কী ছিল। ধরা যাক, সেটি ছিল পুলিশ, তাহলে তিনি দ্বিতীয় পছন্দের ক্যাডারই (পুলিশ) পাবেন।
► যিনি ৭০তম হয়েছেন, তাঁর প্রথম পছন্দ যদি হয় প্রশাসন, তাহলে তিনি তাঁর পছন্দের ক্যাডারই পাবেন। কারণ প্রশাসন ক্যাডার তো তখনো শেষ হয়নি।
যদি তাঁর প্রথম পছন্দ হতো পররাষ্ট্র, তাহলে যেহেতু সেই ক্যাডার এর মধ্যে শেষ, তাই দেখা হতো তার দ্বিতীয় পছন্দ কী।
মোট কথা, পদসংখ্যা কমবেশি যা-ই হোক, আপনি আপনার পছন্দের ক্যাডারগুলোই একের পর এক পূরণ করে যাবেন। পরে আপনার মেধাক্রমের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে, পছন্দের ক্যাডারটি আপনি পাচ্ছেন, নাকি পাচ্ছেন না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন