ভাইভা অভিজ্ঞতা: সহকারী সচিব ও সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন, কমিশনারের কার্যালয়, কক্সবাজার
ভাইভা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন- শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী সচিব ও সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন , কমিশনারের কার্যালয়, কক্সবাজার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে অনার্স এবং জৈব প্রযুক্তি বিষয়ে ২০১৬ সালে মাস্টার্স করেছি। ৩৫তম বিসিএসে অংশ নিয়েছি, ভাইভা হয়েছিল ২০১৬ সালের মার্চে।
এটাই আমার প্রথম ভাইভা। বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আলতাফ আলী। বোর্ডে চেয়ারম্যানসহ মোট ছিলেন তিনজন। ভাইভা বোর্ডে আমার সিরিয়াল ছিল ১২ নম্বর। ১৫ মিনিট ছিলাম। ভাইভার শেষে হঠাৎ বোর্ডের একজন রেগে বললেন, ‘আপনি চলে যান, আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন। ’ শুনে খুবই হতাশ হলাম। পরে চূড়ান্ত ফলাফলে দেখি প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছি। আমার প্রথম পছন্দও ছিল প্রশাসন ক্যাডার।
বোর্ডে আমাকে শিক্ষা ও কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন বেশি করা হয়েছিল।
ভাইভা—
আমি : May I come in, Sir?
চেয়ারম্যান : What’s your name?
আমি : শেখ জাবের আহমেদ, নাম বলতে বলতে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। সবাই চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে, কেউ কোনো কথা বলছেন না। চেয়ারম্যান স্যার আমার কাগজপত্র দেখছিলেন। প্রায় এক মিনিট পর আমি জিজ্ঞেস করলাম—স্যার, আমি বসতে পারি?
এক্সটার্নাল-১ : বসতে চাও?
আমি : জি স্যার, চাই।
এক্সটার্নাল-১ : ঠিক আছে, তাহলে বসো।
আমি : ধন্যবাদ স্যার।
চেয়ারম্যান : কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
আমি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
চেয়ারম্যান : ১৭ মার্চ কেন বিখ্যাত?
আমি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ ছাড়া দিনটি জাতীয় শিশুদিবস।
চেয়ারম্যান : কোথাও জব করছ?
আমি : ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রজেক্টে কাজ করছি।
চেয়ারম্যান : পিইসি ও জেএসসি তুমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করো?
আমি : না, আমি সমর্থন করি না।
চেয়ারম্যান : কেন করো না?
আমি : আমার মনে হয়, এই বয়সের ছাত্র-ছাত্রীরা পাবলিক পরীক্ষার চাপ নিতে পারবে না। প্রথমত আদব-কায়দা, নৈতিকতা, সুশিক্ষা, দায়িত্ববোধ এবং খেলাধুলার মাধ্যমে বড় করে গড়ে তুলতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা না হওয়াই আমার মতে বেশি ভালো।
চেয়ারম্যান : তোমার প্রথম পছন্দ ‘প্রশাসন ক্যাডার’ কেন? সত্যি করে বলো।
আমি : প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমার একটি চাকরি দরকার।
সিলেকশনের সময় দেখলাম—প্রশাসন ক্যাডারে পদের সংখ্যা ৩০০। পদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় মনে হলো, এখানে চেষ্টা করলে হয়তো বা চাকরিটা হয়ে যাবে!
এক্সটার্নাল-২ : তুমি তো কৃষির ছাত্র, বলো তো পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন কোন বিজ্ঞানী?
আমি : ড. মাকসুদুল আলম স্যার।
এক্সটার্নাল-২ : পাটের জীবনরহস্য সম্পর্কে তুমি কী জানো?
আমি : পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন ড. মাকসুদুল আলম স্যার ও তাঁর সহযোগীরা। পাটের কাণ্ড পচা রোগের জন্য দায়ী ছত্রাকের নাম ম্যাক্রফোমিনা ফ্যাসিওলিনা। যখন আমরা পাটের জেনোম সিকোয়েন্স সম্পর্কে অবগত থাকব, তখন আমরা সেখানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সহজেই ওই ক্ষতিকর ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারব। এতে পাটের গুণগত মান ঠিক থাকবে; ম্যাক্রফোমিনা ফ্যাসিওলিনা ছত্রাকের আক্রমণে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতো তা থেকেও কৃষককে বাঁচানো যাবে।
এক্সটার্নাল-২ : পাটের উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
আমি : সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পাটের বস্তা ও ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া দেশীয়ভাবে পাটের উন্নয়নের জন্য ব্যবহূত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করা যেতে পারে। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি পলিব্যাগ, উন্নত বস্তা, বস্ত্রশিল্পের জন্য উপযোগী সুতা, হ্যান্ডব্যাগসহ দৈনন্দিন ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি ও কেনাবেচার মাধ্যমে পাটের উন্নয়ন করা সম্ভব।
এক্সটার্নাল-১ : আচ্ছা, কয়েক দিন পর পর শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করেন। এমপিও মানেটা কী?
আমি : স্যার, আমি তো মনে করতে পারছি না...
এক্সটার্নাল-১ : আপনি চলে যান, আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। (চেয়ারম্যান স্যারকে উদ্দেশ করে) ‘স্যার ছেড়ে দেন, চলে যাক। ’
আমি : (চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ করে কী হলো, বুঝতে পারলাম না। )
চেয়ারম্যান : ঠিক আছে, তুমি এখন আসতে পারো।
আমি : ধন্যবাদ স্যার। আসসালামু আলাইকুম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন