করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বিশ্ব মহামারীর কবলে বাংলাদেশও আজ জর্জরিত। কয়েকটি দেশে সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পেলেও সামগ্রিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন তার ভয়াবহ পর্যায় অতিক্রম করছে। বাংলাদেশেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। দিন দিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো- করোনাভাইরাস সংক্রমণ যে শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই তৈরি করছে তা কিন্তু নয়, সামগ্রিক আর্থসামজিক ও পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
লকডাউন ও স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ অন্যান্য কারণে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মন্দাভাব বিরাজমান। এজন্য অনেক প্রতিষ্ঠানেই আয়ের উৎস সংকুচিত হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় কমানোর জন্য বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে নিরুপায় হয়ে করোনার এ আপদকালীন সময়ে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু নিজের ও পরিবারের ব্যয়ভার তো আর থেমে নেই। তাই সময়ের সাথে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
করোনা সংক্রমণে আমাদের দেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সবার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর দিকে সবার সতর্ক দৃষ্টি থাকায় নন-কোভিড রোগীদেরও সেবা পেতে ক্ষেত্রবিশেষে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী করোনা সংক্রমিত হওয়ায় এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতার জন্য সীমিত সেবাকর্মীদের পক্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষের সেবাদানও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় কর্মহীন ও বেকাররা কমিউনিটি নার্স হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক, নার্সিং হোম, বৃদ্ধাশ্রম বা বাসা-বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তিদের পরিচর্যার জন্য চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে যাদের প্যারামেডিক বা ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষণ আছে; তারা তাদের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাতে পারেন। তাছাড়া যাদের এরকম কোনো প্রশিক্ষণ নেই; তারা অনলাইনভিত্তিক প্রাথমিক সেবার বিভিন্ন কনটেন্টের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া প্যারামেডিক বা নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার স্বল্পমেয়াদী কোর্স করতে পারেন। জনবলের স্বল্পতায় অনেক বাসা-বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি বা বৃদ্ধাশ্রমের বয়োঃবৃদ্ধ বসবাসকারীদের সেবা-যত্নের বিষয়টি হয়তো বিঘ্নিত হচ্ছে। কিংবা বিভিন্ন নার্সিং হোম বা ক্লিনিকেও হয়তো জনবলের স্বল্পতার জন্য সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে চুক্তিভিত্তিক কমিউনিটি নার্স হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সাময়িকভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
করোনা মহামারীর এ সময়ে যেভাবেই জীবিকা নির্বাহ করেন না কেন, তা অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করা উচিত। কেউ যদি এরকম চুক্তিভিত্তিক কমিউনিটি নার্স হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ ছাড়াও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ রয়েছে, যেমন- ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে রোগীর দীর্ঘদিন ধরে সেবা-শুশ্রূষার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া লকডাউন বা রেড জোন ইত্যাদি কারণেও জরুরি সময়ে ওই রোগীদের বারবার স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যাতায়াতও ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে। তাই অনেকেই চান এরকম রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক কমিউনিটি নার্স রাখতে।
আপনার যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বা প্রাথমিক নার্সিং সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা বা কোর্স থাকে, তাহলে সহজেই আপনি এসব ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক আবেদন করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনার কর্মসংস্থান হতে পারে, তেমনি বিভিন্ন রোগীর সেবা-শুশ্রূষার সমস্যারও কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে।
@ডা. হিমেল ঘোষ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন