ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ও প্রস্তুতি

ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত আটটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসার (জেনারেল) পদে নিয়োগ পাবেন ১০৬৯ জন। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এই নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ও প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহফুজ জামি ও জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আলমগীর মাহমুদ পলাশ। বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

পরীক্ষা পদ্ধতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন সমন্বিত আট ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (জেনারেল) পদের পরীক্ষা হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরের এমসিকিউ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন) পদ্ধতিতে। দ্বিতীয় ধাপে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) হবে ২৫ নম্বরের ওপর।

প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটারের ওপর মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এ ক্ষেত্রে গণিতে ৩০, ইংরেজিতে ২৫, বাংলায় ২০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ১০ নম্বরের প্রশ্ন এসে থাকে।

ব্যাংকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে

রুটিন করুন ছক কষে

দিন দিন চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতা শুধু বাড়ছেই। এদিকে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নিয়োগের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আবেদন এক পদের জন্য করুন বা একাধিক পদের জন্য, প্রস্তুতি নিতে হবে সেই অনুযায়ী ছক কষে। প্রতিদিনের সময়টাকে বণ্টন করতে হবে প্রার্থীর বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা, বিষয় বণ্টন পরিকল্পনা ও পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাব্য তারিখকে সামনে রেখে। শুরু থেকেই দৈনিক পড়াশোনার জন্য নিজের সুবিধামতো একটি ছক বা পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। সে পরিকল্পনায় পড়ার জন্য কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখতে পারেন। গণিত ও ইংরেজির জন্য বেশি সময় বরাদ্দ রেখে রুটিন ঠিক করুন। রুটিনমাফিক পড়াশোনা করলে প্রস্তুতি গোছানো হয় এবং সময় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোনো যায়।

প্রস্তুতি হবে নানামুখী

শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের বিগত ৮-১০ বছরের প্রশ্ন সমাধান করুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখুন, যাতে পরীক্ষার আগে চোখ বুলিয়ে যেতে পারেন। বিগত নিয়োগ পরীক্ষার অনেক প্রশ্নও হুবহু চলে আসে অনেক সময়। আবার হুবহু না এলেও একই নিয়ম থেকে আসতে পারে। বিগত সালের প্রশ্নসংবলিত (সমাধানসহ) বই আগে সংগ্রহ করবেন। এরপর খেয়াল করে দেখুন, প্রশ্ন কোন ধরনের হয়, কোন কোন ধাঁচের প্রশ্ন সাধারণত বেশি আসে। এগুলো নোট করে রাখতে পারেন। তবে এখন প্রশ্নের ধরনেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টা মাথায় রেখে নানামুখী প্রস্তুতি নিলে প্রশ্ন যেমনই হোক, ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারবেন।

অনলাইন থেকেও প্রশ্ন আসে

চাকরির পরীক্ষাগুলোতে আজকাল গণিত, ইংরেজি ও কম্পিউটার (আইসিটি) বিষয়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিদেশি বিভিন্ন সাইট থেকে আসতে দেখা গেছে। এমন কিছু উল্লেখযোগ্য সাইট হচ্ছে—sawaal.com, examveda.com, indiabix.com, gyanjosh.com ইত্যাদি।

অঙ্ক করুন কম সময়ে

পরীক্ষার হলে ৬০ মিনিটের মধ্যে ৮০ থেকে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এর মধ্যে গণিতের ওপর ২০-২৪টি প্রশ্ন থাকে। পুরো অঙ্ক করে উত্তর বের করতে গেলে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই দ্রুত অঙ্কের উত্তর বের করার শর্ট টেকনিক শিখে নিতে পারেন। অঙ্কের উত্তর করার জন্য অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই। তবে যাঁদের গণিতের বেসিক দুর্বল তাঁদের শর্ট টেকনিকের কথা না ভেবে আপাতত বেসিক ঝালাইয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এর জন্য ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির গণিত বোর্ড বইগুলো অনুসরণ করুন। এ ছাড়া বাজারে ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতির বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। গণিতের বেসিক পাকাপোক্ত হলে শর্ট টেকনিক শেখা যেতে পারে।

ইংরেজিতে বাড়তি জোর দিতে হবে

গণিতের পাশাপাশি ইংরেজির ওপরও বাড়তি জোর দিতে হবে। প্রতিদিন ভোরে ইংরেজি বিষয় দিয়েই প্রস্তুতির পড়া শুরু করতে পারেন। ইংরেজিতে ভালো করতে বেশি বেশি ভোকাবুলারি পড়তে পারেন। ব্যাংকে চাকরি পেতে ভোকাবুলারি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভোকাবুলারির জন্য দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এভাবে প্রতিদিন আপনি পড়তে থাকলে নতুন নতুন ভোকাবুলারি আপনার স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা হবে। আর আগে শেখা ভোকাবুলারিগুলোও ঝালাই হয়ে যাবে। ভোকাবুলারির পাশাপাশি ইংরেজি গ্রামারে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংক চাকরি পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্যের চেয়ে ইংরেজি গ্রামার থেকেই বেশি প্রশ্ন আসে। তাই ইংরেজি গ্রামার বেশি বেশি অনুশীলন করবেন। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় অনুবাদ করতে। যদি নিয়মিত অনুবাদ করতে থাকেন তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনার অনুবাদে সাবলীলতা ও দক্ষতা চলে আসবে। আর এই দক্ষতা আপনার পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় দারুণ কাজে দেবে।

অনুবাদ অনুশীলনের জন্য ‘মাসিক এডিটরিয়াল নিউজ’ পড়তে পারেন। বিগত বছরের ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার অনুবাদ (ব্যাখ্যাসহ) দেওয়া আছে, এমন বই দেখতে পারেন।

বাংলাও গুরুত্বপূর্ণ

চাকরির প্রস্তুতিতে ‘বাংলা’কে সহজ মনে করে অনেকে অবহেলা করেন। প্রিলিমিনারি ও লিখিত—উভয় ক্ষেত্রেই বাংলার গুরুত্ব সমান। প্রিলিমিনারিতে ২০-২৫ নম্বর এবং লিখিততে ৬০-৭০ নম্বর থাকে। বাংলা প্রশ্নের ধরন কঠিন নাকি সহজ হবে, এগুলো প্রশ্ন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। বাংলার প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ উভয়ের ওপর সমান দক্ষতা থাকতে হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে উন্মুক্ত ও তথ্যবহুল লেখার অনুশীলন করতে হবে। এর জন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় ও সমসাময়িক ঘটনাবলি দেখতে পারেন।

সময় ব্যবস্থাপনা জরুরি

প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো পর্যায়ে গেলে বাসায় বসেই মডেল টেস্ট দিতে পারেন। এতে পরীক্ষার হলে সময়ের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে। বিগত বছরের একসেট প্রশ্ন অথবা গুরুত্বপূর্ণ নমুনা প্রশ্নপত্র দেখে মডেল টেস্ট দিতে পারেন। এরপর তা নিজেই মূল্যায়ন করুন। প্রশ্নের নির্ধারিত বা সীমিত সময়ের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে উত্তর করতে হয়।

সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার জন্য অনেকেই ভালো প্রস্তুতির পরও পরীক্ষায় সব উত্তর সময়ের অভাবে করতে পারেন না।

কোন ব্যাংকে কত পদ

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-১৪৩টি, জনতা ব্যাংক লিমিটেড-১৯৭টি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-৬৮টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-৪টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-৫৩৯টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-২২টি, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-৬২টি, কর্মসংস্থান ব্যাংক-৭টি এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-২৭টি।

 

অনলাইনে আবেদনের নিয়ম

►  সিনিয়র অফিসার (জেনারেল) পদে আবেদনের শেষ তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২২।

► নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও আবেদনের লিংক :

http://www.eRecruitment.BB.Org.BD